শাহেদ মিজান, সিবিএন:
সোনাদিয়ায় অর্থনৈতিক অঞ্চল করার কাজের অগ্রগতি হচ্ছে। এই নিয়ে বেজার তত্ত্বাবধানে পুরো প্রকল্পের পুন: সমীক্ষা ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সমীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা আইডাব্লিওএম ও সিইজিআইএস সম্প্রতি সমীক্ষার কাজ সম্পন্ন করেছে। বিগত এক বছর ধরে সংস্থা দুটি সমন্বয় রেখে এই সমীক্ষা চালিয়েছেন। সংস্থা দুটি যৌথভাবে এই সমীক্ষার প্রতিবেদন আনষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে। তবে তাদের প্রতিবেদনের সাথে বেজার সমীক্ষার প্রতিবেদনের বিপরীত্য রয়েছে। তাই বেজারকে তাদের সমীক্ষার সংশোধন করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
রোববার (১২ মে) কক্সবাজার শহরের এক হোটেলের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় এই তথ্য জানানো হয়। কর্মশালায় পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন ও সমীক্ষা পরিচালনাকারী আইডাব্লিওএম ও সিইজিআইএস বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, অর্থনৈতিক অঞ্চল করার জন্য সোনাদিয়া ও ঘটিভাঙার কিছু অংশসহ ৯ হাজার ১০০ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছে বেজা। সেখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত মতে আনুষঙ্গিক কর্মকান্ডের প্রকল্প হাতে নিয়েছে বেজা। এই জন্য বেজার পক্ষ থেকে প্রাথমিক একটি সমীক্ষাও চালানো হয়েছিল। সমীক্ষার পর নিরাপত্তাজনিত অবকাঠামো তৈরি করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে সোনাদিয়া ও আশেপাশের এলাকা প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বেজার সমীক্ষা প্রতিবেদনের আরো অধিকতর যাচাইয়ের জন্য পুন: সমীক্ষার উদ্যোগ নেয়। এই সমীক্ষার জন্য আইডাব্লিওএম ও সিইজিআইএস দায়িত্ব দেয়া হয়। সংস্থা দুটি ২০১৮ সালের ২১ জানুয়ারি থেকে সমীক্ষার কাজ শুরু করেন। তারা দীর্ঘ এক বছরের সময় ধরে নানা আঙ্গিকে সমীক্ষা চালান। সমীক্ষা কার্যক্রম শেষ করে সংস্থা দুটি যৌথভাবে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।
সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশের কর্মশালায় জানানো হয়, বেজার সমীক্ষার সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত সমীক্ষার প্রতিবেদনের কিছুটা বিপরীত্য রয়েছে। সোনাদিয়ার জীববৈচিত্র রক্ষায় এই প্রতিবেদনের আলোকে বেজার প্রতিবেদন সংশোধন করতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোনাদিয়া ও ঘটিভাঙ্গার কিছু অংশ নিয়ে বেজা যে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে তা করার উপযোগিতা রয়েছে। তবে শিল্প-কারখানা নয়, পর্যটন ভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে হবে। পর্যটন ভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়লেও তার একটা সীমাবদ্ধতা থাকবে হবে।
প্রতিবেদনের তথ্য মতে, সোনাদিয়া একটি জোয়ার-ভাটা সমৃদ্ধ পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা। সুবিশাল সাগরের হাতছানি, চমৎকার প্যারাবন, ঝাউবাগান, পরিযায়ী পাখির আবাস্থল, কচ্ছপের প্রজননকেন্দ্রসহ নানাভাবে প্রাকৃতিক জীববৈচিত্রের একটি লীলাভূমি। সব মিলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সব ধরণের পরিবেশগত উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। এই চিত্র বিবেচনায় দ্বীপটিতে কোনো ধরনের ভারী অবকাঠামো নির্মাণ ব্যতিরেখে ইকোট্যুরিজম করা যাবে। ইকোট্যুরিজম বাস্তবায়ন করা হলেও তার সীমাবদ্ধতা রাখতে হবে। তার জন্য পায়ে হেঁটে দ্বীপ ভ্রমণের জন্য প্রাকৃতিক পথ, প্যারাবন সৃজন, বন্যপ্রাণী পুনর্বাসন, কচ্ছপের আবাসস্থল সংরক্ষণ, পাখিদের অভয়ারণ্য নিশ্চিতকরণ, পরিবেশ বান্ধব হোটেল-মোটেল তৈরি করতে হবে।
তথ্য মতে, পরিবেশ ও জীববৈচিত্রগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সোনাদিয়ায় অর্থনৈতিক অঞ্চলের আওতায় স্বাদু পানির পুকুর খনন, সৌর শক্তির ব্যবহার, গলফ ও লন টেনিস খেলার মাঠ তৈরি, শিশুদের জন্য বিনোদন পার্ক, সুইমিলপুল, মসজিদ, জাদুঘর, কমিউনিটি সেন্টার তৈরি, রেগুলেটর সংস্কার এবং নদী ও সমুদ্র ভ্রমণের জন্য হারবার সুবিধাদি স্থাপন করা যাবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নদী ভ্রমণের জন্য ৩৩ কি.মি. এবং সমুদ্র ভ্রমণের জন্য ৭০ কি.মি. পথ করা যাবে। প্রতিদিন তিন শিফটে নদী ভ্রমণ এবং এক শিফটে সমুদ্র ভ্রমণ করা যাবে। প্রতি নৌযানে ৪০জন এবং সমুদ্র ভ্রমণের নৌযানে সর্বোচ্চ ১২০ জন পরিবহণের সক্ষমতা থাকবে। পায়ে হাঁটার প্রাকৃতিক পথ হবে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ১৬ কি.মি. এবং কাঠ, বাঁশ এবং অন্যান্য স্থানীয় উপাদান ব্যবহার করে পথটি তৈরি করা করতে হবে। দ্বীপের সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য আরো প্যারাবন সৃজন করতে হবে। বিভিন্ন উৎস হতে হরিণ ও বানর এনে প্যারাবনে অবমুক্ত করতে হবে। সুপেয় পানির জন্য গভীর নলকূপ ও বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য রিটেশন পুকুর করতে হবে। ১.১৮ বর্গ কি.মি’র ১২টি রিটেশন পুকুর করতে হবে। ঘটিভাঙ্গা এলাকায় পরিবেশ বান্ধব হোটেল-মোটেল করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এসব হোটেল-মোটেল পরিচালনায় পরিবেশ দূষণ সর্বনি¤œ পর্যায়ে রাখতে হবে। ২০ জনের ধারণ ক্ষমতার সর্বোচ্চ ১০ হোটেল-মোটেল করা যাবে।
প্রতিবেদনে তিন একর জায়গার উপর শৈবাল (স্পিরিলুনা চাষ, মুক্তা চাষ এবং কমিউনিটি ট্যুরিজম এর সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া ৩০ একর জমির উপর ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার একটি সৌর বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। বেজার প্রতিবেদনে দ্বীপে বেড়িবাঁধ দেয়ার কথা থাকলেও এই প্রতিবেদনে বাঁধের বিষয়টি নাকচ করা হয়েছে। কারণ বাঁধ দিলে সেখানকার পুরো ইকো সিস্টেম ভেঙে পড়বে।
সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রস্তুতকারীর কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সোনাদিয়া পর্যটনের অপার সুযোগ তৈরি হবে। আয়-ব্যয়ের বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রকল্পটি আর্থিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভজনক। সার্বিক বিবেচনায় সোনাদিয়া-ঘটিভাঙ্গা দ্বীপে ইকোট্যুরিজম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যাবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিইজিআইএস’র প্রকৌশলী শাকিল আহমেদ বলেন, ‘দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে আমরা সমীক্ষাটি চালিয়েছি। সমীক্ষায় প্রতিটি বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়েছে। সব বিষয় পুংখানুপুঙ্খভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অত্যন্ত নিবিড় গবেষণা করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।’
সিইজিআইএস’র শীর্ষ সারির কর্মকর্তা সৌরভ মাহমুদ বলেন, ‘ প্রকাশিত সমীক্ষার এই প্রতিবেদনটি এখনো খসড়া। কিছুদিনের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে তা কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হবে।’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।